ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ , ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভুয়া দলিলে কয়েকটি ব্যাংক থেকে ৫০ কোটি টাকা ঋণ

বাংলার জমিন ডেস্ক :
আপলোড সময় : ০৪-০৫-২০২৪ ০৪:৩১:১২ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০৪-০৫-২০২৪ ০৪:৩৩:৪০ অপরাহ্ন
ভুয়া দলিলে কয়েকটি ব্যাংক থেকে ৫০ কোটি টাকা ঋণ ফাইল ছবি
ভুয়া তথ্য ব্যবহার করে জাল জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (টিআইএন) তৈরি করত চক্রটি। পরে এসব জাল কাগজপত্র ব্যবহার করে রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে তৈরি করত ফ্ল্যাটের ভুয়া দলিল। পরে এসব দলিল বিভিন্ন ব্যাংকে মর্টগেজ রেখে মোটা অংকের টাকা ঋণ নিতো চক্রের সদস্যরা। তারা এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ৫০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে ভুয়া দলিল জমা দিয়ে।


এমন অভিযোগে গতকাল শুক্রবার (৩ মে) ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে এ সংঘবদ্ধ ফ্ল্যাট জালিয়াতি চক্রের মাস্টারমাইন্ড জয়নাল আবেদীন ওরফে ইদ্রিসসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।

গ্রেপ্তার জালিয়াতি চক্রের অন্য সদস্যরা হলেন- ইদ্রিসের প্রধান সহযোগী মো. রাকিব হোসেন (৩৩), জয়নালের ভায়রা ভাই কে এম মোস্তাফিজুর রহমান (৫৪), জাল কাগজপত্র ও এনআইডি প্রস্তুতকারক মো. লিটন মাহমুদ (৪০), ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল প্রস্তুতকারক হাবিবুর রহমান মিঠু (৩০), এনআরবিসির ব্যাংক কর্মকর্তা হিরু মোল্যা (৪৪), আব্দুস সাত্তার (৫৪) ও সৈয়দ তারেক আলী (৫৪)।

এর আগে, এই চক্রের ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাকিদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণা কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সিলমোহর, একই ব্যক্তির একাধিক এনআইডি ও টিন নম্বর, মোবাইল ফোন, বিভিন্ন ব্যাংকের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডসহ নগদ ৩ লাখ টাকা জব্দ করা হয়।

শনিবার (৪ মে) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগস্থ সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশের এই সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া।

তিনি বলেন, সম্প্রতি সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট গোপন সূত্রে জানতে পারে, একটি সংঘবদ্ধ চক্র জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন পরিদপ্তরের কিছু অসাধু সদস্যদের সহযোগিতায় একাধিক এনআইডি ও টিন তৈরি করে আসছে। পরবর্তীতে এই এনআইডি ও টিন ব্যবহার করে চক্রের সদস্যরা ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসের অসাধু লোকদের মাধ্যমে চক্রের সদস্যদের নামে ফ্ল্যাট/ জমির একাধিক মূল দলিল তৈরি করত। পরে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এসব জাল দলিল দিয়ে দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মর্টগেজ রেখে একটি ফ্ল্যাটের বিপরীতে একাধিক ঋণ নিত। এভাবে তারা প্রায় ৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে।

তিনি আরও বলেন, এ সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের মূল হোতা জয়নাল আবেদীন ইদ্রিস। তার নেতৃত্বে এ চক্রটি ঢাকার বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাট বিক্রির ফাঁদ পেতে জাল দলিলের মাধ্যমে পথে বসিয়েছে বহু ফ্ল্যাট মালিককে। পাশাপাশি সম্ভাব্য ফ্ল্যাট ক্রেতাদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা এবং ব্যাংক ঋণের বোঝা চাপিয়ে তাদেরকে করেছে নিঃস্ব। সিআইডির অনুসন্ধানে ফ্ল্যাট জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধভাবে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের সত্যতা পেয়ে জয়নালের মালিকাধীন প্রতিষ্ঠান রুমানা জুয়েলার্স, নীড় এস্টেট প্রোপার্টিস লিমিটেড, স্নেহা এন্টারপ্রাইজ, ই আর ইন্টারন্যাশনালসহ চক্রের ২৫ জন সদস্যের বিরুদ্ধে ডিএমপির উত্তরা-পূর্ব থানায় মানিলন্ডারিং আইনে মামলা সিআইডি।

সিআইডি প্রধান বলেন, গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এ ফ্ল্যাট জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ চক্রের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন পরিদপ্তরের কিছু অসাধুকর্মকর্তা ও দালাল, ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসের অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী, বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অসাধু ব্যাংকার জড়িত।

মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, এ চক্রের মাস্টারমাইন্ড জয়নাল রাজধানীর মিরপুরে কো-অপারেটিভ মার্কেটে একটি স্বর্ণের দোকানের কর্মচারী ছিলেন। পরে তিনি ও শহিদুল ইসলাম সবুজ মিলে ফ্ল্যাট জালিয়াতি শুরু করেন। এভাবে শতকোটি টাকার মালিক বনে যান জয়নাল। তার অন্যতম প্রধান সহযোগী দুই স্ত্রী রোমানা সিদ্দিক ও রাবেয়া আক্তার মুক্তা। প্রতারণার জন্য নিজ নামে ছয়টি এনআইডি ব্যবহার করেন তিনি। এসব এনআইডি দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকে ৫০টির অধিক হিসাব খোলেন। অর্থ আত্মসাতের টাকা দিয়ে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ৭ তলা বাড়ি, ৩টি ফ্ল্যাট, মিরপুর ও আশকোনায় ৩টি ফ্ল্যাট কেনেন জয়নাল।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Jamin

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ